Skip to main content

আধুনিকতা ও বিবেক।

সময়টা ছিলো ০৮/১২/২০১৫ খ্রি: সকালে ঘুম থেকে উঠে শারীরিক অসুস্থ্যতার জন্য গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ডাক্তার দেখিয়ে হাটতে হাটতে বাসায় ফিরছিলাম। রুপশি বাংলা হোটেলের সামনে রাস্তার অপর পাশে পাম্পের এক কোনায় দেখলাম কিছু লোকের জটলা। আমি বরাবরই সন্দেহ প্রবন, উৎসুক প্রকৃতির ব্যাক্তি হওয়ায় ভিড় ঠেলে জটলার মধ্যে প্রবেশ করলাম। কোন এক ভদ্র ঘরের ৬০ উর্দ্ধ ব্যাক্তিকে ঘিরে কিছু লোক কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে। পাশে দাড়িয়ে এক রিক্সাওলা আকুতি মিনতি বলছে -"স্যার আমার ভাড়াটা না দেন, আসল টাকাতো দিবেন"। আমি আরো উৎসুক হয়ে মনোনিবেশ করে বৃদ্ধের দিকে তাকাই একবার,জনতার দিকে তাকাই একবার আবার রিক্সাওলার দিকে তাকাই। ভদ্র লোকটার বয়সের ভারে চামড়া গুছিয়ে গেছে। ফর্সা চেহারার ৬০ উর্দ্ধ লোকটার পরনে ছিলো সাদা শার্ট, কালো ফুল প্যান্ট। আমি জনৈক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলাম -"দাদা হইছেটা কি"?

জনৈক ব্যাক্তির কথা আর ঘটনাটা দেখে বুঝলাম হয় লোকটি মানুষিকভাবে অসুস্থ্য অথবা অন্ন কিছু। লোকটাকে কেউ অসম্মান করে কথা বলছেনা। যদিও সেখানে উগ্রমেজাজি বেশ কয়জন লোক ছিল। তার পরোও তারা লোকটাকে বাবা, চাচা, বলে বুঝানোর যথেষ্ট চেষ্টা করছিল। কিন্তু, ৬০ উর্দ্ধ ভদ্র লোকটা কিছুতেই বুঝতে চাইছিল না। হতে পারে তিনি কোন এলিট সোসাইটির নাগরিক। রিক্সাভাড়া করে ধানমন্ডি ২৭ থেকে রুপশি বাংলা হোটেলে এসেছে। কিন্তু তিনি কেন যেন রিক্সার ভাড়াটা দিবেন না। ভেবেছিলাম  তার কাছে খুচরা টাকা নাই। সবগুলোই পাঁচশত টাকার নোট । তার কথায় তিনি রিক্সাওলাকে টাকা দিয়েছেন। রিক্সাওলারও কথা সে পাঁচশত টাকা দিয়েছে । কিন্তু, বিনিময়ে রিক্সাওলার কাছে থাকা খুচরা ৪৮০ টাকা ফেরত নিয়েছে। এখানে জটলা আরেকটা। বয়বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি ১০টি বেনশন সিগারেট কিনে আনতে বলে রিক্সাওয়ালাকে শর্ত হলো তার দেওয়া পাঁচশত টাকা দিয়ে কিনে আনতে হবে। রিক্সাওয়ালা সেটাই করে কিনে এবং পাঁচশত টাকা থেকে বাকি খুচরা টাকাও ভদ্রলোককে দিয়ে দেয়। এখন ভদ্র লোকটি চলে যাবে। কিন্তু, রিক্সাওলার কাছে থাকা টাকা, সিগারেট, সিগারেট কিনে বাচা টাকাও নিয়ে চলে যাবে। বিপত্তিটা এখানেই। প্রথমে রিক্সাওয়ালাকে ৫০০ টাকা দিলো, রিক্সাওয়ালা ৪৮০ টাকা ফেরত দিলো, আবার ভাড়া হিসেবে দেওয়া সেই নোট থেকে সিগারেট কিনে চাওয়া পাশাপাশি সিগারেট কিনে বেচে যাওয়া টাকাটাও ফেরত নেওয়া। তাহলে লোকটি ভাড়া হিসেবে কি দিলো? সবাই লোকটাকে বুঝায়। সুনাগরিক মহোদয় কিছুতেই মানতে চাইছিলো না। লোকটি কেন এটা করছে ভাবতে থাকি। আমার উৎসুক মনটা এবার চোখ দেয় লোকটার আচারনে। সে মোটেই স্বভাবিক ছিল না। আমি তাকে বলি -"আপনার প্যান্টের চেন খোলা। চেনটি লাগিয়ে নিন"। সে কোন কথাই কানে দেয় না। বুঝলাম লোকটা মদ্যপান করে এসেছে। সর্বশেষে পুলিশ এসে যখন টাকাটা দিয়ে দিতে বলে, তখন লোকটি হুমকি দেয় সবাইকে দেখে নিবে। যাই হোক, শেষে টাকাটা উদ্ধার হয়। লোকটার হাতে থাকা যে ঘড়িটা, তার দাম দুই হাজারের কম হবে না। আঙ্গুলের রিংটা হাজার পনেরশত হবে। কাছে মাস্টার কার্ড, ডেবিট, ক্রেডিট কার্ডসহ কাছে দুই হাজার বা এরকমই নগদ টাকাও ছিলো। অথচ সে রিক্সাওলার পাওনা ৫০০ টাকা দিবেনা।

আসি এখন আমার চিন্তা ধারায়। প্রথমত ৫০০টাকাটা বড় কোন কথা ছিলোনা তার কাছে। কথাটা তার সম্মান। আধুনিকতার ছোয়ায় যখন সারা বিশ্ব মাতোয়ারা, বাংলাদেশ কেন না? হ্যাঁ মানি যে, আধুনিকতার দরকার আছে, কিন্তু বিবেকবোধ কে বিক্রি করে না। মদ্যপান করেন (যদিও মুসলমানদের জন্য হারাম) ভাল কথা আপনার সমাজ তাতে কোন বাধা দিবেনা। কিন্তু, যে জিনিস আপনার মস্তিস্ক বিকৃতি করে দেবে সেটা দিয়ে আধুনিকতা কেন? মদ্যপান করেন তাতে মাতাল হয়ে যাবেন কেন? আমার জানামতে অন্যান্য দেশে নির্দিষ্ট পরিমানে আপনি মদ্যপান করে বাইরে যেতে পারবেন, যেটাতে অন্যের ক্ষতি বা নিজের ক্ষতি না হয়। আপনি বেশি মদ্যপান করতে চাইলে নিজের রুম আছে। মাতাল হয়ে বউ পিটান, ভাংচুর করেন কিন্তু বাইরে পাবলিককে বিরক্ত করার অধিকার কে দিয়েছে? আধুনিকতার জোয়ারে নিজের ইজ্জত টাকে সামলাতে পারেন না। গরিবের টাকা মেরে বারে গিয়ে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করে রাস্তায় পাগল সাজা কোন সংস্কৃতি? নিজের বিবেককে বলেন, আপনি আমি মানুষ, সব ধর্মের সেরা সৃষ্টি আপনি। কোন নেশায় মত্ত? জানিনা আপনাদের মত কুলাঙ্গার এলিট শ্রেণীর ভদ্রলোক আর কতজন আছে? আমি মদ্যপান করতে মানা করছিনা। নিজের ভাল পাগলেও বুঝে। কিন্তু, এমন হবেননা যাতে আপনার সম্মানের ছিটে ফুটাও ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে যায়।

★★★★স্বপ্ন★★★★

Comments

Popular posts from this blog

ভুল করেছি ছাত্র জীবনে ভালোবেসে পার্ট-২

  কেন  জানি মনে হল ওকে একা একা বাসায় যেতে দেওয়াটা ভাল দেখায় না, কারন আকাশ সুস্থ থাকলেতো ওকে নিয়েই যেত। যা হোক বিষয় টা ভালই লাগছিল আমার। কলি যতক্ষন না ফিরে ততক্ষনে আমি একটু পাশের দোকানে বসে চা বিড়ি পান করিগে। কলিকে দেখে আমার ভিতরে কেমন একটা হেঁচকা টান অনুভব করছি কেন জানিনা, জানার প্রয়োজনো নাই। মোটামোটি প্রায় ২টার সময় কলির কোচিং শেষ হবে। আমি বাধ্য অভিবাকের মত অপেক্ষা করতে লাগলাম। কলির কোচিং শেষ হয়েছে হয়তো দশ মিনিট হবে। আমার মনে ছিল না হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অপরিচিত নাম্বার রিসিভ করলাম। শুধু এটুকু বললো, " আমি চলে যাব? " বুঝলাম কলির ফোন। সবে মাত্র সিগারেটটা শেষ করেছি। ধুর কি ভাববে কলি পাশাপাশি বসলে তো গা দিয়ে সিগারেটের গন্ধ পাবে। নে বাবা কি করি। যা ভাবার ভাববে আমি কি কলির কিছু হই? আপন মনে ভাবনা এল। আবার ভাবলাম কি আবোল তাবোল ভাবছি। যা হোক কলির কাছে গেলাম, রিক্সা নিয়ে আকাশের বাসায় ফিরছিলাম। কোন কথা নাই আমার মুখে। কলি বললো- "আপনি সুন্দর মেয়েদের বেশি পছন্দ করেন তাই না?" আমি কিছুটা ভয় পেলাম, চারিদিকে তাকালাম রাস্তার কোন মেয়ের দিকে তাকালাম কি? কই না তাকাই নি। আমি বললাম,...

ভূল করেছি ছাত্র জীবনে ভালবেসে - পার্ট ১

ঘুম ভাংছে সকালের মিষ্টি রোদের আলো চোখে পরার মাধ্যমে। দাত ব্রাশ করে নাস্তা খেয়ে আমি ফোনটা হাতে নিয়ে আকাশকে ফোন দিলাম। ফোনোলাপ সেরে একটা ডাইরি হাতে নিয়ে ঝন্টু মামার চায়ের দোকানে আসি। আমি নিয়মিত এখানে এসে সকালে সিগারেট না পান করলে সকাল টাই শুভ হয়না। জানিনা কতটুকু সত্য। সকালের কাজ শেষ। শালার আকাশ ফালতুটা এখনো আসছেনা কেন। আবার একটা ফোন দিলাম "কিরে হারামি তরে না কইলাম জলদি আয়া পর ক্যামনে কি করেসাই বুজবার পারলাম না।" ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠ " আকাশ ভাইয়া ফ্রেশ হচ্ছে আপনিকে?" বাশ একটা খাইলাম বটে। আমি জানি আকাশের কোন বোন নাই হালায় বাপের একমাত্র পুলা তয় হেইডা কে?। মেয়েটি- " আর শুনুন আকাশ ভাই হারামিনা কথাটা মনে রাখবেন, আপনারা শিক্ষিত মানুষ হয়ে রাস্তার লোকদের মত কথা বলেন কেন?" নে বাবা কি এমন দোশ করলাম আমিতো আমার বন্ধুরে কইছি হেয়েেছ ক্যাডা। যাকগা ঝারি খাওয়ার জা খেয়ে ফেলেছি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম। সিগারেট আর চা আরেক বারের জন্য অডার দিয়ে ঝন্টু মামার দোকানের মাচায় বসলাম। কিছুসময় পরে ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন রিসিভার করে বললাম " ঝন্টু মামার দোকানে আয়...

নির্ঘুম রাত শেষে দিনের আলো কবে আসবে?

অনেক হল, এবার বুঝি আপনার আমার পালা। আগে ছিল প্রতিটি রাত হয়তো নির্ঘুম যেত। কিন্তু এখন রাত দিন কোন সময়কে বিশ্বাস করতে পারবোনা। মনে হয় এই বুঝি ধারাল স্বশস্ত্র হয়ে আমার মন্ডুটাকে বিভৎসভাবে ধর থেকে আলাদা করে দিবে। আগে দেখেছি চোর ডাকাত তাদের কাজের জন্য রাতকে প্রাধন্য দিতো। গ্রামের মানুষদের রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিতে দেখেছি, চোর ডাকাত যেন না আসে। কিন্তু এখন রাত দিন পাহাড়া দিতেও দেখায় যায়। ঐ যে সারিবদ্ধ লাশ কেন তারা কথা বলে না। তারা কফিনে বন্ধি, চিতায় জ্বলে, দাফনে মাটিচাপায় পড়ে থাকে। কিছু করার নাই। সুর্য উঠছে কিন্তু আলো দিতে পারছে না। মেঘের কালো ছায়ায় বন্ধি। আলোর দিশা পাবার আগে কালো মেঘেরা বন্ধি করে দিচ্ছে সেই সূর্যের আলো। কেন? উত্তর আপনারো নেই আমারো নাই। উত্তর নেই তা নয় হারিয়ে ফেলেছি মেঘকে সরিয়ে প্রকৃত আলোর সন্ধানে বের হওয়ার ক্ষমতা। হারিয়ে ফেলেছি সেই সাহস, যেটা পূজি করে বাশের লাঠি হাতে নিয়ে নেমেছিল বীর বাঙালী শত্রুকে মোকাবেলার জন্য। দেশের প্রতিটি মানুষ আজ মেঘের হাতে বন্ধী। মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাঁসে। সূর্য হেসে করবে কি? যদি মেঘকে সবাই ভয় পায়। মুক্তচিন্তাকরা পাপ মহা পাপ। কার...

বিদ্রহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর সমাধী।

গায়ে হলুদের মেহেদী ডিজাইন। Mehndi designs.