কেন জানি মনে হল ওকে একা একা বাসায় যেতে দেওয়াটা ভাল দেখায় না, কারন আকাশ সুস্থ থাকলেতো ওকে নিয়েই যেত। যা হোক বিষয় টা ভালই লাগছিল আমার। কলি যতক্ষন না ফিরে ততক্ষনে আমি একটু পাশের দোকানে বসে চা বিড়ি পান করিগে। কলিকে দেখে আমার ভিতরে কেমন একটা হেঁচকা টান অনুভব করছি কেন জানিনা, জানার প্রয়োজনো নাই। মোটামোটি প্রায় ২টার সময় কলির কোচিং শেষ হবে। আমি বাধ্য অভিবাকের মত অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কলির কোচিং শেষ হয়েছে হয়তো দশ মিনিট হবে। আমার মনে ছিল না হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অপরিচিত নাম্বার রিসিভ করলাম। শুধু এটুকু বললো,
" আমি চলে যাব? " বুঝলাম কলির ফোন।
সবে মাত্র সিগারেটটা শেষ করেছি। ধুর কি ভাববে কলি পাশাপাশি বসলে তো গা দিয়ে সিগারেটের গন্ধ পাবে। নে বাবা কি করি। যা ভাবার ভাববে আমি কি কলির কিছু হই? আপন মনে ভাবনা এল। আবার ভাবলাম কি আবোল তাবোল ভাবছি। যা হোক কলির কাছে গেলাম, রিক্সা নিয়ে আকাশের বাসায় ফিরছিলাম। কোন কথা নাই আমার মুখে। কলি বললো- "আপনি সুন্দর মেয়েদের বেশি পছন্দ করেন তাই না?"
"না এমনি জিজ্ঞাস করলাম।" কলি উত্তর দিলো।
দুজনের মুখে কথা নেই, চলে এলাম বাসায়। খালাম্মা জোর করে খেতে দিলেন, আমি খেয়ে কিছুক্ষন আকাশের পাশে বসে গল্প করে চলে এলাম। কলি পোশাক পরিবর্তন করে আকাশের রুমে এলো। আমি আরো অবাক ওকে খুব ভাল লাগছিল। "আকাশ ভাইয়া মেডিসিন নিয়েছো?" কলি আকাশকে বললো।
আকাশ উত্তর দিলো, "হ্যা।"
কলি আকাশের রুমে কি জানি নিতে এসেছিল। আকাশ বললো আমাকে, " দোস্ত ক্যাম্পাসে গেলিনা?"
"রুমি ফোন দিেয়ছিল, আমি বলেছি আকাশ একটু ব্যাস্ত থাকায় আমি আকাশ কেউ যাইনি, তুমি ক্লাস টা ভাল করে কর।" আমি আকাশকে বললাম।
" দোস্ত কাল কেউ কলিরে নিয়ে যাস, আমি সুস্থ থাকলে কষ্ট দিতাম না তরে।"আকাশ আমায় বললো।
কলি হুট করে বলে ফেললো, "থাক ভাইয়া উনি ব্যাস্ত,আমি একা যেতে পারবো। আজতো চিনে এলাম।"
কন্ঠটায় রাগ আর বিরক্ত ছিল কলির। কষ্ট হালকা একটু খেলাম। বিদায় নিয়ে মেসের দিকে এলাম। ভাবছিলাম কি করলাম আমি, মেয়েটা রেগে গেছে কেন?
রাতে বারান্দায় বসে ভাবছি, মেয়েটার জন্য এমন লাগে কেন। আকাশকে বলবো,আবার যদি কিছু মনে করে বসে না থাক কিছু বলবো না। ফোনটা নিয়ে হাতাহাতি করতে করতে কলির নাম্বারটা চোখে পরলো। ফোন দিব? নাহ যদি হিতের থেকে বিপরীত হয় রাতটাতে মনের মধ্যে অস্থির লাগছিল। একটা সিগারেট নিয়ে ফুকাতে লাগলাম।
একটু সকালে উঠলাম রাতে ভেবেছি কথা গুলো কলিকেই বলবো সাহস করে। আটটার আগে উপস্থিত হলাম আকাশের বাসায় । মনে হলো বডিগার্ডের চাকরি নিয়েছি। আজ একটু সুস্থ আকাশ, আকাশ কলিকে বললো," কলি তোর স্বপ্ন ভাইকে চা নাস্তা দে।"
কলি চা বিস্কুট নিয়ে এলো। নাস্তা শেষ করে আকাশের সাথে ফাজলামি করছিলাম। বেশ কিছুক্ষন পরে আকাশ টয়লেটে গেল। আমি খাটের উপর বসেছিলাম। কলি রুমে এলো আমি ওকে দেখে আবার হারিয়ে যাই। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।কলির মুখে মিষ্টি হাসি দেেখ আরো কি জানি বেড়ে গেল।
"এই যে চলেন যাই।" কলি আমায় বললো।
আমি বাস্তব জগতে এলাম। আমি আর কলি বেরিয়ে পরলাম।
বেশ কিছু দিন হল কলিকে দেিখনা। আজ দেখবো তবে কোচিং এর সামনে গিয়ে। এখন ওদের ছুটি হয় ৪টার সময়। এর মধ্যে আমি প্রায় গিয়ে লুকিয়ে কলিকে দেখে আসতাম। আমি নিজেকে নতুন করে জানলাম যে প্রেমে পরেছি। আকাশকে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বললাম। ও কয়দিন আমার সাথে কথা ঠিকভাবে বলেনা।
গত কাল বলেছে "কলিরা গরিব তুই ভাল ছাত্র ওর চেয়ে ভাল মেয়ে পাবি বন্ধু। দেখ আমি রাজি হলে কলি রাজি হলে তুই কলিকে পাবি কিন্তু তোর ভবিষ্যতটা কি? তুই তোর দিকে ভাব।"
"আমিওতো সেরকম আহামরি বড়লোক না,এটা ভাবিস কেন? না আমাকে তোর পছন্দ না, আমি কলির যোগ্যনা।" আকাশকে অভিমান নিয়ে বললাম।
আকাশ আমাকে চড় মেরেছিল দুইটা। সাথে সাথে আমাকে জরিয়ে ধরে কেদেছিল। বলেছিল, "আমি যদি পৃথিবীর সবাইকে এক চোখে দেখি তোকে দেখি আত্মা দিয়ে, তুই কলির যোগ্য বরং কলি তোর যোগ্য না।"আকাশ ফুপিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিল।
পরে দুই বন্দু শান্ত হয়ে বাসার দিকে চলে আসি।
৪টার সময় কলির ক্লাস শেষ হবে।আমি ফার্মগেটে দারিয়ে আছি। এক নজর কলিকে দেখে চলে গেলাম। রাতে এসএমএস এলো চোর কে মেয়রা কম পছন্দ করে। নাম্বার টা চিনলাম না। আধা ঘন্টা পর ফোন দিলাম,কিন্তু বন্ধ পেলাম। বুঝলাম কলি হতে পারে। ফোনটা তে চুমু দিয়ে বুকের উপর রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
আজকের মত ঘুম কখনো হয়নি। সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস করে চলে এলাম। কি এক কাজে ফার্ম গেট গেলাম। দেখি কলি সামনে, "কি কেমন আছেন?"কলি মৃদু হাঁসতে হাসতে বললো।
" হাম ভালো "মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দিলাম।
"আর আসেন না যে বাসায়, কি রাগ করেছেন? কলি প্রশ্ন করলো।
না সূচক উত্তর দিলাম। "মিস কলি তোমাকে না মানে আপনাকে কিছু বলার ছিল। " ছল ছল চোখে তাকিয়ে বললাম।
"আপনে থেকে তুমি এই জন্যই তাই না? "কলির ঠোটে হাঁসি মাখা সুরে বললো।
কলির দুষ্টু ঠোটে মিিষ্ট হাসি আমার মনে শীতল হাওয়া বয়ে দিল। কলিকে বললাম "মানে? "
"মানে আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। "কলি আমাকে বললো।
"ও আচ্ছা ত তোমার আজ এতো তাড়াতাড়ি ছুটি?" তুতলিয়ে বললাম।
" পরিক্ষা ছিলোতো তাই। "কলি জবাব দিলো।
"মনে কিছু না করলে একটা কথা ববলতাম "একটু ভয়ে বললাম।
"বলেন" কলি মাথা নেড়ে উত্তর দিলো।
" এখানে না চলো আঁগারগাও থেকে ঘুরে আসি।" আমি বললাম।
রাজি হল কলি। রিক্সা নিয়ে গেলাম দু জনে উদ্যানে, পাশে বসার জায়গায় বসে আছি কারো মুখে কথা নাই। "এই জন্য আপনার সাথে কোিচং এ আসতে চাইতাম না, কি বলার জন্য ডাকলেন যে ফার্ম গেট বলা যাতনা। এখানে আসতে হবে? তাও আসলাম আর বুবার মত বসে, কিছু না বললে গেলাম। " কলি একটু জোরেই কথাটা বললো।
এই বলে উঠে দাড়াতেই আমি হাত ধরে টান দিলাম। কলি থেমে গিয়ে আবার আমার পাশে এসে বসলো। "আমি জানি আপনি আমার মুখ থেকে তুমি শব্দটি শুনতে চান।" কলি আমাকে বললো।
আমি আবাক ও খুশি হয়ে বাচ্চা ছেলের মতো মাথা নাড়লাম। "আচ্ছা বলো কি এমন কথা?" কলি আমাকে বললো।
আমি কলিকে বললাম "কেন ডেকেছি বুঝ না?" কলির তাচ্ছিল্ল ভরা হাসি ভালো লাগলেও জিদও হচ্ছিল। নিজের অজান্তে কলির দুই কাধে ধরে আচ্ছা করে ঝাকি দিেয় বললাম "তুমি বোঝ না? তোমার সামনে এলে নিজেকে হারাই ফেলি, চোরের মত তোমাকে দেখতে আসি, কেন বুঝনা? কিছু দিন আগে এসএমএস দিয়েছো, আমি ফোনেটিক চুমু খেয়েছি এখনো বুকের মধ্যে ফোন নিয়ে ঘুমাই, কেন বুঝনা? তোমাকে কি চিৎকার করে বলতে হবে, কলি আমি তোমাকে ভালবাসি।? "একদমে কথা শেষ করে কলিকে ছেড়ে দিয়ে মাটির দিকে মুখ চেয়ে বসে পরলাম।
দুই মিনিট কেউ কোন কথা বললাম না। কিছুক্ষন পরে আমার ডান হাতের বাহুতে কারো দুই হাত ও ডান কাধে কারো মাথা অনুভব করলাম। কানের কাছে শব্দ শুনতে পেলাম " আই লাভ ইউ টু"
আমি আর আমি নাই মুখ ফিরিয়ে কলির চোখের দিকে তাকালাম। চোখের মাঝে আমার রাজ্যের রাণীকে দেখলাম। ঠোট বলছে এইতো স্বপ্ন তোমার সারা দিনের ক্লান্তি দুর করার জন্য আমি প্রস্তুত। নিজের অজান্তে আমাদের দুজনের মুখ এক জায়গায় চলে গেল, কলির ঠোটের সাথে আমার ঠোট, কি জানি দুজন দুজনকে বলছে। কত সময় ছিলাম ওভাবে জানিনা। বাস্তবিক জীবনে আসতেই কলির মুখে লজ্জার ছাপ দেখলাম। কলি অতি আদুরে স্বভাবে আমার কাধে মাথা দিয়ে বললো," তুমি আমাকে ভুলে যেওনা। আমি মারা যাব কিন্তু।" আমি কলির গালটি ধরে," লক্ষীটি ও কথা কেন।" ঠোটে আরেকটা চুমু একে দিয়ে ঐদিনের মত বিদায় নিলাম।......... (চলবে)

Comments
Post a Comment
Thank You For Staying With Us.